আজকে থেকে চালু হয়ে গেলো মেট্রোরেল। সাদা শার্ট-সাদা চুলের যেই ভদ্রলোককে দেখছেন উনি ড. ফাওজুল কবির খান। সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। ভদ্রলোক নিজেই আজকে মেট্রোরেলে করে যাত্রা করেছেন। উনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ১৬ আগস্ট, আর আজকে ২৫ আগস্ট। মানুষটার সিমপ্লিসিটির দিকে তাকান, আর জাস্ট মনে মনে ভাবেন উনার জায়গায় ওবায়দুল কাদের আছেন, দেখবেন ভাবতেই বিবমিষা জাগবে!
১৮ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো মেট্রোরেল। হাসিনা আর ওবায়দুল কাদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেখিয়েছিলো, আদতে ক্ষতি হয়েছিলো শুধু দুইটা স্টেশনের, কিন্তু তারা সেটা স্পেসিফিক্যালি ব্রিফ করেনাই। ওই দুই স্টেশন বন্ধ রেখে মেট্রোরেল ইজিলি চলতে পারতো, কিন্তু তারা সামগ্রিকভাবেই দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পায়তারা করছিলো ছাত্রদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে।বলেছিলো এক বছর সময় লাগবে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু করতে এবং ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
অথচ ১৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার ১০ দিনের মাথাতেই মেট্রোরেল যাত্রী পরিবহন শুরু করে দিলো। আরও আগে হতে পারতো, যদি মেট্রোরেল কর্মচারীরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করতো। কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন বন্ধ রেখে বাকী ১৪ টা স্টেশন চালু হয়ে গেছে। ড. ফাওজুল কবির খান জাপানি স্টেকহোল্ডারদের সাথে জরুরি বৈঠক করবেন কীভাবে জাপান থেকে যন্ত্রপাতি এনে কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন চালু করা যায় অল্প কয়েকমাসের ভেতরেই। ওবায়দুল কাদেররা যেখানে বলেছিলো ওই দুই স্টেশন একবছরের আগে সংস্কার করা সম্ভব নয় কোনমতেই, এখন নতুন উপদেষ্টা চেষ্টা করছেন একবছরের বহু আগেই যাতে ওই দুইটা স্টেশন চালু করা যায়। জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আজকেই মিটিং এ বসবেন উনি এই ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
সাধারণ মানুষের উপকারের কথা বাদ দিলেও মেট্রোরেল চালু হওয়ায় দুইটা স্ট্রাটেজিক ব্যাপার সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো।
১. ওবায়দুল কাদের এবং হাসিনা বলেছিলো মেট্রোরেলের এতোই ক্ষতি হয়েছে যে তা পুরোপুরি চালু হতে ১ বছর সময় লাগবে, আসলে ওরা নরমাল ক্ষতির চেয়ে কয়েক শতগুণ বেশি দেখানোর চেষ্টা করেছিলো রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। ১৪ টা স্টেশন ইতোমধ্যেই চালু করে মেট্রোরেল জার্নি শুরু করে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে ওই দুইটা স্টেশন চালু করতে একবছর না, বরং মাত্র কয়েকমাসে চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছেন নতুন উপদেষ্টা। মেট্রোরেল চালু হয়ে যাওয়ায় মানুষ অটোমেটিক বুঝে গেছে স্বৈরাচারীরা জাতির সাথে কী পরিমাণ মিথ্যাচার করতো।
২. ওরা দাবি করেছিলো মেট্রোরেল চালু করতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে। অথচ টেকনিক্যাল এক্সপার্টরা জানিয়েছেন মিরপুর ১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশনে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তিন মাস বা তার কিছু বেশি সময়ের ভেতর ঠিকঠাক করা পসিবল জাপান থেকে যন্ত্রপাতি এনে। আর সামগ্রিক কাজে খরচ হতে পারে মোটে ৫০ কোটির মত। তারমানে চোরের বাচ্চা চোর লীগের নেতারা যে এইভাবে এক্সকিউজ তৈরী করে এখান থেকেও ২৫০ কোটি টাকা চুরির ধান্দায় ছিলো, এটাও প্রমাণিত হয়ে যাবে।
স্বৈরাচার আর আজ্ঞাবহ সুশীলদের মিথ্যার বয়ান এভাবেই ভেঙেচুরে পড়তে থাকবে একে একে। সবাই অটোমেটিক বুঝতে পারবে কীভাবে তাদেরকে মিথ্যার বটিকা সেবন করিয়ে চেতনার সাগরে ডুবিয়ে রেখে লুটপাট করা হতো।
Saiyed Abdullah