আয়াতুল কুরসির পবিত্র কুরআনের সবচাইতে দামি ও মূল্যবান আয়াত। দৈনিক সকাল-সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ব্যাপারে হাদিসে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর জন্য জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। এবং জ্বীন-ভূত ও শত্রুর আক্রমণসহ সকল প্রকার বিপদ থেকে হেফাজতের সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত: পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنّةِ إِلّا أَنْ يَمُوتَ.
প্রত্যেক ফরয নামাযের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাঁধা থাকবে না।
অর্থাৎ মৃত্যু পর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহুল জামে-৬৪৬৪) এই হাদীস থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার নির্দেশনা ও ফজিলত পাওয়া গেল।
ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
রাতে শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ বালামুসিবত থেকে হেফাজত করবেন। শুধু তাই নয়; ফিরিশতার মাধ্যমে তার ধন-সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা দান করবেন।
এ সম্পর্কে সহিহ বুখারীতে চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আয়াতুল কুরসির ফজিলত হাদিস
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রমযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে দুহাত ভরে সেখান থেকে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল; আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্থ, আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম।
যখন সকাল হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
হে আবু হুরায়রা, তোমার রাতের বন্দীকে কি করলে?
আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।
‘সে আবার আসবে’ আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম।
সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে যাব।
সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকাল হলে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার বন্দীকে কী করলে?
আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি আবারও বললেন, খবরদার সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম।
সে আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব।
এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেক বার বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।
আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে ঘুমাতে যাবে।তখন আয়াতুল কুরসি আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহ্র তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। একথা বলায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দীকে কী করল?
আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে আমাকে বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি আমাকে বললেন, সেই বাক্যগুলো কী?
আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহ্র তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না।
এ ঘটনা শোনার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে।
কিন্তু সাবধান, সে মিথ্যুক।
হে আবু হুরায়রা! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে?
আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩১১)
এই হাদীস থেকে বুঝা যায়,রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পড়লে শয়তানের সকল ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ থাকা যায়। এবং রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে চোর-ডাকাত, জ্বীন-ভূত থেকেও জান-মালের নিরাপত্তা পাওয়া যায়।
আয়াতুল কুরসির ফজিলতের হাদিসের আরবি অংশ
. وَقَالَ عُثْمَانُ بْنُ الْهَيْثَمِ أَبُو عَمْرٍو حَدَّثَنَا عَوْفٌ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ وَكَّلَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنْ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ وَقُلْتُ وَاللهِ لأرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ قَالَ إِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ قَالَ فَخَلَّيْتُ عَنْهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ النَّبِيُّ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالاً فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ لِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ إِنَّهُ سَيَعُودُ فَرَصَدْتُهُ فَجَاءَ يَحْثُو مِنْ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ لأرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ قَالَ دَعْنِي فَإِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ لاَ أَعُودُ فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً وَعِيَالاً فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ فَرَصَدْتُهُ الثَّالِثَةَ فَجَاءَ يَحْثُو مِنْ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ لأرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ وَهَذَا آخِرُ ثَلاَثِ مَرَّاتٍ أَنَّكَ تَزْعُمُ لاَ تَعُودُ ثُمَّ تَعُودُ قَالَ دَعْنِي أُعَلِّمْكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللهُ بِهَا قُلْتُ مَا هُوَ قَالَ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ { اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ } حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنْ اللهِ حَافِظٌ وَلاَ يَقْرَبَنَّكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهَا فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ قَالَ مَا هِيَ قُلْتُ قَالَ لِي إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ { اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ } وَقَالَ لِي لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنْ اللهِ حَافِظٌ وَلاَ يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ وَكَانُوا أَحْرَصَ شَيْءٍ عَلَى الْخَيْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ لاَ قَالَ ذَاكَ شَيْطَانٌ’
সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফজিলত:
যে ব্যাক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে জ্বীন-ভূত, চোর-ডাকাতসহ সকল বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।এবং যে সন্ধ্যা বেলায় পাঠ করবে। সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। সুবহানাল্লাহ
এ সম্পর্কে হাদিসে একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে:
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রাঃ থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তা থেকে তার খেজুর কমে যেত।
তাই তিনি এক রাতে পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি অল্প বয়সী কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন।
সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি কোন্ জাতির? জিন না মানব?
সে বলল, জিন।
তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি।
সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো।
সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো জ্বিন নেই।
অতঃপর তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ?
সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু থেকে খেজুর কমাতে বা নিতে এসেছি।
তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী?
সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটিঃ
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ…
অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি
যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত সে আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। এরপর সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খবীস সত্য বলেছে।
(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৮৪;) (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস-২০৬৪)
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, শয়তান,জ্বীন-ভূতের আসর বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে হলে সকাল-সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হবে।
আয়াতুল কুরসি দিনে কতবার পাঠ করতে হবে?
হাদীসের আলোকে প্রতিদিন অন্তত আটবার এই আয়াতুল কুরসি পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যায়,
কখন আয়াতুল কুরসি পড়তে হয়?
- সকাল-সন্ধ্যায়।
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর।
- ঘুমানোর সময়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে,কেউ যদি এই বরকতময় আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহঃ
আয়াতুল কুরসি আরবি:
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।
আয়াতুল কুরসির বাংলা অনুবাদ:
“আল্লাহ! তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক ও পালনকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। যা কিছু আকাশসমূহে ও যা কিছু পৃথিবীতে আছে সবই তাঁর। কে এমন আছে যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা কিছু তাদের সম্মুখে এবং যা কিছু তাদের পশ্চাতে। আর তারা তাঁর জ্ঞান থেকে কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তাঁর কুরসি সমগ্র আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে পরিব্যাপ্ত করেছে। আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহিমান্বিত।”
আয়াতুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ফজিলতপূর্ণ আয়াতগুলোর মধ্যে একটি। এটি সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, আয়াতুল কুরসির তেলাওয়াতের মাধ্যমে মুমিনরা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে পারেন, এবং এর অসংখ্য আধ্যাত্মিক ও দৈনন্দিন ফজিলত রয়েছে।
আয়াতুল কুরসির তাফসীর ও ব্যাখ্যা:
১. আল্লাহর একত্ব: এই আয়াতের প্রথমেই আল্লাহর একত্ব ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই, যাঁকে ইবাদত করা যেতে পারে।
২. চিরঞ্জীব ও পালনকারী: আল্লাহ সব সময় জাগ্রত ও সর্বকর্তা, তিনি কখনো ঘুমান না এবং তিনি সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
৩. আল্লাহর অগাধ জ্ঞান: আল্লাহর জ্ঞান অসীম, তিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবকিছু জানেন।
৪. সৃষ্টিজগতের ওপর আল্লাহর প্রভাব: আল্লাহর কুরসি আসমান ও জমিনকে ধারণ করে আছে, এবং আল্লাহ এদের দেখাশোনায় কখনো ক্লান্ত হন না।
আয়াতুল কুরসির ১০টি ফজিলত:
১. সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার উপায়। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা ব্যক্তিকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার ও জান্নাতের মাঝে কেবল মৃত্যু থাকবে।”
(সহিহুল জামে-৬৪৬৪)
২. ঘর থেকে শয়তান দূর রাখে। আয়াতুল কুরসি ঘরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর একজন রক্ষক নিযুক্ত করবেন এবং তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।”
(সহিহ বোখারি- ২৩১১)
৩. বিপদ-আপদ থেকে সুরক্ষা। আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহ তার পাঠককে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।
৪. আল্লাহর নৈকট্য লাভ। আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায় এবং মুমিনের আত্মার শান্তি হয়।
৫. রাতের ঘুমের সুরক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, আয়াতুল কুরসি রাতে পাঠ করলে সারা রাত আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়।
৬. শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা। আয়াতুল কুরসির তেলাওয়াত মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং বিভিন্ন শারীরিক অসুখ থেকে মুক্তি দেয়।
৭. দৈনন্দিন জীবনে সফলতা। আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করলে দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যার সমাধান হয় এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
৮. আল্লাহর হেফাজত লাভ। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা মানে আল্লাহর হেফাজত লাভ করা। এটা আমাদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করে।
৯. দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি। যারা দুঃস্বপ্ন দেখে, তারা আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পায়।
১০. জ্বিন-ভূতের আসর থেকে মুক্তি। নিয়মিত আয়াতুল কুরসি আমল করলে বা পাঠ করে শরীরে ফুঁ দিলে জ্বিন-ভূতের আসর বা অনিষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উপসংহার
আয়াতুল কুরসি শুধু একটি আয়াত নয়, বরং আল্লাহর ক্ষমতা, জ্ঞান, এবং একত্বের মহিমা প্রকাশকারী একটি বিশেষ সুরা। এটি মুমিনদের জন্য সুরক্ষা, শান্তি, এবং সফলতার উৎস হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে আয়াতুল কুরসির অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা মুসলিম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভ করতে পারেন, এবং দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আয়াতুল কুরসি আমাদের ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা বাড়ায়।
প্রাসঙ্গিক কিছু দিক:
প্রতিদিন অন্তত পাঁচবার ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা উচিত।
রাতে ঘুমানোর আগে এটি তেলাওয়াত করলে আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়।
সকাল-সন্ধ্যা একবার করে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা।
দুশ্চিন্তা, অশান্তি বা বিপদের মুহূর্তে আয়াতুল কুরসি বিশেষ সুরক্ষা দেয়।
এই আয়াতটির সঠিক তেলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যা জানা এবং তার উপর আমল করা মুমিনের জীবনে অসাধারণ ফজিলত বয়ে আনতে পারে।
এতে যেমন মুমিনের জ্ঞান ও ঈমান বৃদ্ধি পায় তেমনি তার মন-মস্তিষ্ক, আত্মা ও হৃদয় কুরআনের নূরে নূরানী হয়ে ওঠে।
FAQ আয়াতুল কুরসির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন:
আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়?
আয়াতুল কুরসি দিনের যে কোনো সময় পাঠ করা যায়। তবে বিশেষ করে প্রত্যকে ফরজ নামাজের পর, রাতে ঘুমানোর আগে, সকাল-সন্ধ্যা এবং কোনো বিপদ বা সমস্যার সময় এটি পাঠ করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।
আয়াতুল কুরসি কেন এত ফজিলতপূর্ণ?
আয়াতুল কুরসি আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার উপর কেন্দ্রীভূত একটি আয়াত, যা মুমিনদের জন্য সুরক্ষা, বরকত, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বহু হাদিসে আয়াতুল কুরসির ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
আয়াতুল কুরসি কি কোনো বিশেষ সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, আয়াতুল কুরসি শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা দেয় এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।জ্বিন-ভূতের আসর ও চোর-ডাকাতের ক্ষতিসহ যাবতীয় বিপদ শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে তা থেকে সুরক্ষা লাভ করা যাবে।
আয়াতুল কুরসি কি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য?
আয়াতুল কুরসি মূলত মুসলমানদের জন্য, কারণ এটি ইসলামের বিশ্বাসের একটি অংশ। তবে আল্লাহর শক্তি ও সৃষ্টির প্রতি তাঁর কর্তৃত্ব সর্বজনীন, তাই আয়াতুল কুরসির প্রভাব ও ফজিলত সকলের জন্য হতে পারে।
কি করলে আয়াতুল কুরসির ফজিলত আরও বৃদ্ধি পায়?
আয়াতুল কুরসির ফজিলত পেতে নিয়মিত ও নিষ্ঠার সাথে এটি পাঠ করা উচিত। এছাড়া, নামাজের পর পাঠ করা, রাতে ঘুমানোর আগে তেলাওয়াত করা, এবং বিপদে-আপদে আল্লাহর উপর ভরসা করে পাঠ করা ফজিলত বৃদ্ধি করে।