আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো যে তাদের বায়াসনেইসের কারণে দৈন্য ভাব কাটাতে পারেনা, তার একটা সুস্পষ্ট উদাহরণ হলো— এরা এখনও শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেবকে ঠিকমতো এপ্রিসিয়েট পর্যন্ত করতে পারছে না।
এবারের বন্যায় শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেব তার আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে মহাকর্মযজ্ঞ পালন করে যাচ্ছেন, তার ছিটেফোঁটাও দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলোতে নাই। গতকাল একদিনে ২০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে তারা, এটা স্রেফ একদিনের হিসাব। প্রতিদিন এই হিসাব বড় হতেই থাকবে। তাছাড়া ত্রাণ সামগ্রী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও যে কতভাবে গোছানো সব উদ্যোগ নিচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, তা হিসাব করতে বসলে দিন পার হয়ে যাবে। হাজার হাজার ভলান্টিয়ার আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করছে এই দুর্যোগ মোকাবিলায়। এমনকি শুধু মুসলমানরাই না, হিন্দু ভাইয়েরাও এবার ডোনেশন করেছেন এখানে, তারাও ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করেছেন। সবাইকে নিয়ে সামাজিক ভাতৃত্ব জোরদার করার একটা ভালো উপলক্ষ এটা।
আমি কারও উদ্যোগকেই ছোট করছিনা, এই দুর্যোগে এক বিন্দু অবদান যে রেখেছে, সেটাও অমূল্য। তবে আফসোসের জায়গাটা হলো দেশের টপ টায়ারের মিডিয়া হাউজগুলো এরকম বহু জায়গা এবং মানুষের উদ্যোগকেই এপ্রিসিয়েট করে বড় বড় স্টোরি করছে। অথচ আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর এত বড় কীর্তি তাদের চোখে ঠিকঠাক পড়েনা কেন?
জাস্ট চিন্তা করেন সেইম কাজটাই যদি বিদ্যানন্দ ( জাস্ট উদাহরণস্বরূপ) বা অন্য কোন এনজিও অথবা কালচারাল জনরার কোন সংগঠন থেকে আসতো, তাহলে দেশের টপ টায়ারের মিডিয়া হাউজগুলো সব লিড স্টোরি করতো তাদের নিয়ে — আমি নিশ্চিত এটা হতোই!
কিন্তু অন্য অনেকের চেয়ে বহুগুণ বেশি কন্ট্রিবিউশন রাখার পরও আহমাদুল্লাহ সাহেব এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নিয়ে তেমন কাভারেজ নেই কেন? এটার উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমি বলি, আমাদের দেশের মিডিয়া এখনও একচোখ বন্ধ করেই চলতে পছন্দ করে।
এবারই কিন্তু প্রথম নয়।
২০২২ সালে সিলেটের বন্যায়ও খুবই ডেডিকেশন নিয়েই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন আহমাদুল্লাহ সাহেব। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কয়েক লক্ষেরও বেশি বৃক্ষরোপন করেছেন, ধারাবাহিকভাবে এবার বর্ষাতেও কয়েক লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন এবং সেখানেই দায়িত্ব শেষ না করে ফলদ বৃক্ষ রোপন করে লোকাল কমিউনিটি ইন্ট্রিগেশনের মাধ্যমে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও করে তারা।
মানুষ এবং সমাজের কল্যাণে বহুকাজই তারা করেছে বিগত দিনগুলোতে। উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার শরণখোলার মানুষজন সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগতে থাকে বছরজুড়েই। তাদের জন্য আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা পানি শোধনাগার তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আইটি কোর্স, ফ্রিল্যান্সিং কোর্সও কনডাক্ট করা হচ্ছে, যাতে করে সমাজের বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখা যায়। উনার ফাউন্ডেশনের যাকাত প্রজেক্টটাও একদম পারফেক্টলি কাজে লাগাচ্ছেন। শাড়ি লুঙ্গি দিয়ে যাকাতের টাকাটা ব্যবহার নয়, বরং যাকাতের অর্থ দিয়ে অস্বচ্ছল পরিবারের ইনকামের রাস্তা তৈরী করে দিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন।
উনি কিন্তু পারতেন শুধু ধর্মীয় বয়ানসর্বস্ব কাজ করতে অন্য আরও বহু মানুষের মত। উনি সেটা না করে দ্বীনি আমলগুলো নিয়ে যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, একইসাথে উনি মাঠে নেমে হাতেকলমে কাজ করে যাচ্ছেন। উনি প্র্যাকটিক্যালিটি ভালো বুঝেন এবং অত্যন্ত গোছানোভাবে নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সমাজের মানুষের জন্য ডিরেক্ট কন্ট্রিবিউশন রাখছেন।
হুজুররা এইটা করে কেন, সেইটা বলে কেন টাইপ খুঁত ধরার বহু লোক আছে, সারাটাদিনই তারা শুধু হুজুরদের দোষই খুঁজে বেড়ায়। আমি বলছিনা যে সব হুজুরই ভালো বা তাদের কাজের সমালোচনা করা যাবে না। অবশ্যই সেটা করা যাবে এবং অ্যাবসার্ড কিছু করলে, সেটা নিয়ে সমালোচনা হওয়াটা অবশ্যই উচিৎ। আমি নিজেও অনেক সময় অনেকের সমালোচনা করেছি। কিন্তু একইসাথে তাদের ভালো কাজগুলোকে কি এপ্রিসিয়েট করা উচিৎ নয়? দুঃখের বিষয় হলো যারা সবসময়ই হুজুরদের দোষ ধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা কখনোই হুজুরদের ভালো কাজ নিয়ে প্রশংসা করে না বা জানতেও চেষ্টা করে না। এই একচোখ বন্ধ মার্কা দীনতা যতদিন না পর্যন্ত মিডিয়া কাটিয়ে উঠতে পারবে, ততোদিন পর্যন্ত তারা গণমানুষের মিডিয়া হয়ে উঠতে পারবে না।
শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেব, আপনার কাজগুলো হয়ত মিডিয়াপাড়ার লোকজন চোখে দেখে না ঠিকমতো কিংবা তারা দেখতেই চায় না আসলে! কিন্তু আপনার এই কাজগুলো যে দেশ ও সমাজের জন্য কতোটা ইম্প্যাক্টফুল, তা হয়ত চোখ-কান খোলা মানুষজন যারা আছে, তারা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারে।
ধন্যবাদ জানাই আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আহমাদুল্লাহ সাহেবকে। আল্লাহ যেন আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন।